সাক্ষাৎকার - শ্যামল মন্ডল


এই বহুযুগের সময়ে আমাদের বেশির ভাগেরই একে অন্যের পরিচয় আলাপ আরো কাছের সূত্র ঘটে ঘটে চলেছে স্যোশাল মিডিয়া নাম ভুবন গ্রামে, সেখানেই পরিচয় শ্যামলের সাথে,শ্যামল মন্ডল - যার কথা তাঁর কাজের কথা আজ এখানে


১. সময় কিভাবে কাটান, যে কোনো সময় বা এখন বিশেষ পরিস্থিতিতে এই?

উঃ: বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যায় নতুন কিছু সৃজনশীল সৃষ্টির মাধ্যমে, ছবি আঁকা, ভাষ্কর্য নির্মাণ, পড়াশোনা, থিয়েটার আর ভালো কিছু সিনেমা দেখে। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টিশীল চিন্তা চেতনায় আঘাত এনেছে। জীবনের গতি কিছুটা হলেও কমিয়ে দিয়েছে, এরফলে অলসতা এসেছে।


২. জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে এবং কেন?

উঃ মা , দুই বছর হলো পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছে ......


৩. লেখা আঁকা পরিচালনা সাথে কার্ফট একটাই জানি আমি কোনটাকে সবচেয়ে আগে রাখবেন এবং কেন অবশ্যই?

উঃ সবটাই তো শিল্প। একে অপরের পরিপূরক। তবে কার্ফটকেই আগে রাখবো কারণ এটাতেই আমি বেশি স্বতন্ত্র ।


৪. এই যে এখন এই করোনা বিশেষত দেখালো অনেক কিছু রকমের অনেক, আপনার কি মনে হয় এই ইউরোপীয় ভাঙন অর্থনীতির, সাথে আমেরিকার, ভারতের অন্তঃসারশূন্যতা পরিস্থিতিতে আনবে কিছু পরিবর্তন পরবর্তী করোনা?

বিশেষত দেখার পার্থক্য আমাদের?

উঃ করোনা মহামারির ফলে মানুষ এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ল। এমন বৃহৎ সভ্যতার সংকট খুব কমই এসেছে। করোনা অধিকাংশ মানুষের মেরুদন্ডকে ভেঙে দিতে সক্ষম হলো। মানুষের বেঁচে থাকা জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়ে গেলো। বেকারত্ব সমস্যা, দারিদ্র্যতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মূল্য বৃদ্ধি, অর্থনীতির ভাঙন এসব তো করোনা আসার আগেই আমাদের মূল সমস্যা ছিলো করোনা পরবর্তীতে এ সমস্যা আরও বহুগুণ বাড়বে। হার মানলে হবেনা কিছুটা বেশি সময় লাগলেও এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে মেরুদন্ড সোজা রেখে বিশ্ব সংকটময় পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করে জয় নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। 

৫. রাজনৈতিক প্রশ্ন করবো? সরাসরি! এই যে দেখলাম কাগজে এ মাসেই রামমন্দিরের শিলান্যাস! আপনার মত কি এ সম্পর্কে? বলতে না চাইলে বলবেন না কখনোই 

উঃ  এত দিন ধরে চলা বহু বিতর্ক,লড়াই, যুদ্ধের হয়তো পরিসমাপ্তি হলো । তবে আর একটা ধর্ম উপাসনা কেন্দ্রের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়না। করোনা এতবড় সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো, বুঝিয়ে দিয়ে গেলো আর মন্দির, মসজিদ নয় বরং উন্নত আরো অনেক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। মানুষের এবার সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। ধর্মীয় ভক্তিতে গদগদ হয়ে নয় , সর্বদা সজাগ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন প্রশাসকের প্রয়োজন যারা মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় চাহিদাটুকু  পূরণ করতে সক্ষম হবে ।

৬. লেখা আঁকা নাটক - কি বলতে চান আলাদা আলাদা করে নাকি বলা একটাই মাধ্যম আলাদা?

উঃ অবশ্যই মাধ্যম টা আলাদা। তবে এরা একই কথা বলে একই রকম ভাবাতে পারে । লেখা দিয়ে অনেক ছবি ফুটিয়ে তোলা যায় , আবার আঁকার মধ্যেও অনেক লেখার কিছু থাকে। এদের সাথে আরও কিছু যুক্ত হয়ে তৈরি হয় নাটক বা থিয়েটার যেমন থিয়েটারে গল্প থাকে ছবি বা দৃশ্য থাকে,আবহ ,আলো থাকে এদেরকে অনুধাবন করার জন্য সর্বপরি থাকে দর্শক। মাধ্যম ভেদে দর্শক ভিন্ন হতেই পারে।

৭. ছবি আঁকা সম্পর্কে বা কাজ জানি না খুব বেশি, তবে ইন্টারনেটে বিভিন্ন জায়গায় পেন্টিং দেখতে গিয়ে চোখে পড়ে ভারতীয় চিত্রশিল্পে এখানেও সেই ধর্ম পুরাণ দেব দেবী প্রাধান্যতা - ধারনা বা দেখাটা ভুল হতেই পারে। কিন্তু সঠিক যদি হয়, এর কারণ আপনার কি বলে মনে হয়? 
নিজের কমফর্ট জোন থেকে ভয় বেরোতে না পারার নাকি কিছু অন্য? 


উঃ ভারতীয় শিল্পের স্বর্ণময় যুগ বলা হয় গুপ্ত যুগকে। এই যুগে স্থাপত্য ও ভাষ্কর্যের উৎকর্ষতা লাভ করে।  গুপ্ত যুগেই অন্যান্য শিল্পের সাথে সাথেই চিত্রশিল্পেরও বিকাশ ঘটে। শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয় । বৌদ্ধ যুগে ভারতীয় চিত্রশিল্প আরো বিস্তারিত হয়। হিন্দু রাজবংশের রাজত্বে রাজন্যবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় অবতার মূর্তি ও চিত্রিত শিল্পকলা হিন্দু ভাবধারায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ভারতীয় চিত্র মূলত আধ্যাত্মিক চিন্তা চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত। ধ্যানই সর্বপ্রধান আঙ্গিক ভারতীয় চিত্রে। বৌদ্ধ, জৈন , রামায়ন , মহাভারত, পুরাণের কাহিনী দেবদেবীদের লৌকিক ও অলৌকিক জীবনযাত্রা তাদের প্রেমলীলা রূপায়িত হয়েছে ভারতীয় চিত্রশিল্পে । এসব ছাড়াও বিভিন্ন জীবজন্তু গাছপালা, ফুল,নদী, মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ভারতীয় চিত্রে।প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকালের শিল্পীগণ সেই ধারাকে অব্যাহত রাখার চেষ্টা করলেও বিবর্তনের সাথে তালে তাল মিলিয়ে আধুনিক চিত্রকলায় বিপুল বৈচিত্র্য ও পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই । আধুনিক চিত্রে বিমূর্তবাদ লক্ষ্য করা যায়।

৮. শ্যামল- সিউড়ি যাইনি কোনোদিন তবে নাম শুনে মনে হচ্ছে যে সবুজে অবুঝ। তেমন সত্যিই?


উঃ অনেকে বলে আমরা যেমন আমাদের নামের মাধ্যমেই  সেই বৈশিষ্ট্যতা  প্রকাশ পায় এটা সম্পূর্ণ কাকতালীয় ব্যাপার। কারণ এর কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তিযুক্ত প্রমান নেই । কোনো মানুষের নাম আনন্দ হওয়ার সত্বেও সে সবসময় দুঃখি হতেই পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাকতালীয় ভাবে আমাদের নামের সাথে আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা গুনাবলী মিলে যায়। সবুজে অবুঝ কিনা আমি নিজে থেকে নিজের সম্বন্ধে কি করে বলি বলতো। আমার পরিচিত আশেপাশের মানুষজন যারা আমাকে ঘিরে থাকে তাঁরাই এ বিষয়ে  সত্যিটা ভালো বলতে পারবে ।

৯. বছর দুয়েক আগে শান্তিনিকেতনে ইউনিভার্সিটির ভেতরে দেখেছিলাম বাংলা লেখাগুলো সেখানে মুছে যাচ্ছে দেওয়া হচ্ছে আস্তে আস্তে, এই যে আগ্রাসন হিন্দির জোর করে ভাষা চাপিয়ে দেওয়া আপনার মনে হয় না বাঙালী এবং অবশ্যই সৃষ্টিমাধ্যমের কর্মী হিসাবে উচিত এগুলো খুব দৃঢ় হাতে রোখা প্রতিবাদ করা?


উঃ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন বাংলার বুকে বাঙালির মাটিতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাতৃভাষা বাংলা , তিনি বাংলায় লিখতেন বাংলায় কথা বলতেন। বিশ্বভারতী বাঙালির ঠাকুর কবিগুরুর আদর্শের ভিত্তিতে তৈরী একটি মুক্ত শিক্ষাঙ্গন।  সেই আদর্শকে ভেঙে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ উঁচু উঁচু প্রাচীর গড়ে তুলছেন। যারা এই স্বৈরাচারী শাসনের বিরোধীতা করছেন কর্তৃপক্ষ তাদের অপমান করছেন। বিশ্বভারতীকে সমস্ত রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার দাম্ভিকতা থেকে মুক্ত রাখার প্রয়োজন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চিরকাল মানসিক উন্মুক্ততা এবং শিক্ষার উদারতার উপর জোর দিয়ে এসেছে তাকে আদপে হিন্দি সম্রাজ্যবাদের নিয়ন্ত্রণে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে খুব দৃঢ় হাতে রোখা ও প্রতিবাদ করা প্রয়োজন আছে।

১০. আমাদের পত্রিকা কখনো পড়া হয়ে ওঠেনি হয়তো আপনার আশা করি, তাও পড়লে জানাবেন কখনো কেমন লাগলো?

উঃ পত্রিকা পড়েছি ভালো লেগেছে খুব ভালো। ভাবনা চিন্তায় ও উন্নত লেখায় সমৃদ্ধ এই পত্রিকা। আরো নানাবিধ লেখা ও বিষয়ে সমৃদ্ধ হোক পত্রিকা। জ্ঞানপিপাসু মানুষের চেষ্টা মেটাক। তোমার ও পত্রিকার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

শ্যামল মন্ডলের কিছু কাজ
















 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন